মালদা

কলসি কাহিনী

 

 

উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যার যুগে কোণঠাসা কুটিরশিল্প। বিজ্ঞানের প্রভাব যত বেড়েছে, গতি বেড়েছে মানব জীবনের। তবে এই গতিশীল জীবন পিছনে ছেড়ে আসছে আমাদেরই ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক বাহকদের।

    আজকের এই বিশেষ প্রতিবেদনের বিষয় মাটির কলসি, যার ডাকনাম কুম্ভ বা কুঁজো। মৃৎশিল্পের শিকড় ছিল আমাদের এই উপমহাদেশ। প্রাচীন সময়কাল থেকে মাটির পাত্রের ব্যবহার ছিল মানবজীবনের অঙ্গ। তীব্র গরমেও ভরসা ছিল মাটির কলসি। কলসিতে জল রাখলে তা ঠান্ডা থাকে, গরমে যা শান্তি দেয় তৃষ্ণার্তদের। প্রাচীনকালের এই আবিষ্কারের পিছনে বৈজ্ঞানিক সম্মত কারণ হল, মাটির কলসির গায়ে থাকে অসংখ্য সূক্ষ্ম ছিদ্র। সেই ছিদ্রগুলি থেকে কলসির গা বেয়ে চুইতে থাকা জল বাষ্পীভূত হয়ে ঠান্ডা রাখে কলসির ভেতরের জলকে।

    এভাবেই গরমে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে মাটির কলসি। কিন্তু বর্তমানে নগরজীবনে অস্তিত্ব সংকটের মুখে এই মাটির কলসি। গরমের সাথে মোকাবিলায় চাহিদা বেড়েছে ফ্রিজ ও এসি-র ব্যবহার। যার প্রভাবে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে তাপমাত্রা। পরিবেশ বান্ধব কলসির ব্যবহারকে আরও সহজ করে তুলতে তাই সচেষ্ট মৃৎশিল্পী দ্বিজেন্দ্রনাথ পাল। কল যুক্ত  মাটির তৈরি জার বাজারে এনে শোরগোল ফেলেছেন তিনি। বর্তমানে কল যুক্ত প্লাস্টিকের জারের ব্যবহার দেখা যায় অধিকাংশ বাড়িতে। সেই ধারণাকে কাজে লাগিয়ে মাটির কুঁজোর অনুকরণে তিনি নির্মাণ করেন এই জলাধার বলে জানান দ্বিজেন্দ্রনাথবাবু।

 

    মাটির তৈরি উন্নত মানের এই জলাধার সাড়া ফেলেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। পাশাপাশি একইসাথে কিছুটা হলেও চাহিদার তালিকায় এসেছে মাটির কলসি।
প্রয়োজন পড়ে না বিদ্যুৎ খরচের,
গরমে মিলে প্রয়োজনীয় ঠান্ডা জলের যোগান তাই শহরের দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন মার্কেটে একমাত্র ওই মাটির উপকরণ বিক্রেতার দোকানে ভিড় বাড়াচ্ছে ক্রেতারা৷ সহজলভ্য এই জলাধার ও কুঁজোর ব্যবহার নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন তাঁরা। এমনকি ওই পাত্রর পরিস্রুত পানীয় জল রাখলেও তা ব্যবহার উপযোগী থাকছে বলে জানান ক্রেতারা।

 

    উন্নত নগরজীবনে বেঁচে থাকুক বাংলার কুটির শিল্প, ব্যবহার বাড়ুক পরিবেশবান্ধব উপকরণগুলির। শ্রীবৃদ্ধি হোক বাংলার সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখার কারিগরদের৷